বঙ্গবাণী ((ব্যাখ্যা)
বঙ্গবাণী
সারসংক্ষেপ
এই কবিতায় কবি আবদুল হাকিম বাংলা ভাষার প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা এবং এর গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। তিনি এমন কিছু মানুষের সমালোচনা করেছেন, যারা বাংলা ভাষায় লেখালেখি বা জ্ঞান চর্চাকে হেয় মনে করে। কবি স্পষ্ট করে বলেছেন যে, স্রষ্টার কাছে সব ভাষাই সমান এবং বাংলা ভাষায় ধর্মীয় জ্ঞান চর্চা করা মোটেই পাপ নয়। যারা নিজ দেশে জন্মে নিজেদের ভাষাকে ঘৃণা করে, তাদের জন্ম নিয়েই তিনি প্রশ্ন তুলেছেন।
প্রতিটি চরণের ব্যাখ্যা
কিতাব পড়িতে যার নাহিক অভ্যাস।
সে সবে কহিল মোতে মনে হাবিলাষ।
ব্যাখ্যা: অনেক মানুষ আছে যাদের বই পড়ার অভ্যাস নেই। তাদের মনের ইচ্ছা ছিল যেন আমি এমন কিছু লিখি যা তারা সহজেই বুঝতে পারে।
তে কাজে নিবেদি বাংলা করিয়া রচন।
নিজ পরিশ্রম তোষি আমি সর্বজন।
ব্যাখ্যা: তাই তিনি সবার সুবিধার জন্য বাংলা ভাষায় কাব্য রচনা করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি তাঁর পরিশ্রম দিয়ে সবাইকে সন্তুষ্ট করতে চেয়েছেন।
আরবি ফারসি শাস্ত্রে নাই কোন রাগ।
দেশী ভাষে বুঝিতে ললাটে পুরে ভাগ।
ব্যাখ্যা: কবি আরবি বা ফারসি ভাষার প্রতি কোনো বিদ্বেষ পোষণ করেন না। তবে তিনি মনে করেন, নিজের মাতৃভাষায় কোনো কিছু বুঝতে পারলে তা ভাগ্যের ব্যাপার।
আরবি ফারসি হিন্দে নাই দুই মত।
যদি বা লিখয়ে আল্লা নবীর ছিফত।
ব্যাখ্যা: তিনি বলছেন যে, আরবি, ফারসি বা হিন্দি ভাষায় যদি আল্লাহ বা নবীর গুণগান লেখা হয়, তাতে কোনো ভুল নেই।
যেই দেশে যেই বাক্য কহে নরগণ।
সেই বাক্য বুঝে প্রভু আপে নিরঞ্জন।
ব্যাখ্যা: কবি বিশ্বাস করেন যে, স্রষ্টা (নিরঞ্জন) সব ভাষা বোঝেন। কোনো দেশের মানুষ যে ভাষাতেই কথা বলুক না কেন, সৃষ্টিকর্তা তা বুঝতে পারেন।
সর্ববাক্য বুঝে প্রভু কিবা হিন্দুয়ানী।
বঙ্গদেশী বাক্য কিবা যত ইতি বাণী।
ব্যাখ্যা: স্রষ্টা কেবল আরবি বা ফারসি নয়, হিন্দুয়ানি ভাষা (সংস্কৃত বা হিন্দি) কিংবা বাংলা ভাষাও বোঝেন।
মারফত ভেদে যার নাহিক গমন।
হিন্দুর অক্ষরে হিংসে সে সবের গণ।
ব্যাখ্যা: যারা আধ্যাত্মিক জ্ঞান (মারফত) থেকে বঞ্চিত, তারাই বাংলা ভাষার অক্ষরকে ঘৃণা করে।
যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী।
সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।
ব্যাখ্যা: যারা এই বাংলায় জন্মেও বাংলা ভাষাকে ঘৃণা করে, কবি তাদের পরিচয় বা জন্ম নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে ন জুয়ায়।
নিজ দেশ তেয়াগী কেন বিদেশ ন যায়।
ব্যাখ্যা: যাদের মনে নিজের দেশের ভাষা ভালো লাগে না, তাদের উচিত এ দেশ ছেড়ে বিদেশে চলে যাওয়া।
মাতা পিতামহ ক্রমে বঙ্গেত বসতি।
দেশী ভাষা উপদেশ মনে হিত অতি।
ব্যাখ্যা: কবি বলছেন, বংশ পরম্পরায় (মাতা ও পিতামহের সময় থেকে) তারা এই বাংলায় বসবাস করছেন। তাই মাতৃভাষায় জ্ঞানার্জন করাই সবচেয়ে উপকারী এবং কল্যাণকর।
Comments
Post a Comment